কেন একজন সৈনিক দেশের সেরা ও প্রথম শ্রেনীর নাগরিক এবং গর্বীত সদস্য ?
এখানে সৈনিক বলতে সেনা নৌ এবং বিমান বাহিনীর “ সৈনিক/এয়ারম্যান/নাবিক ” কে বোঝানো হয়েছে। কারণ এই তিন বাহিনীর সকল কার্যক্রম এবং শৃঙ্খলাজনিত নিয়ম-কানুন একই। সেনা নৌ ও বিমান বাহিনী মিলেই মূলত সশস্ত্র বা সামরিক বাহিনী। সামরিক আইনের মধ্যে এই তিন বাহিনী আওতাভূক্ত। সশস্ত্র বা সামরিক বাহিনীর প্রধান হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। সামরিক বাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে। আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রি হলেন, ”মাননীয় প্রধানমন্ত্রী”।
এবার আসি মূল প্রশ্নের উত্তরেঃ
প্রথমত সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক সম্মুখ-সারীর যোদ্ধা এবং লিখিতভাবে স্বাক্ষর প্রদানকারী যে, ” উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ ও নেতৃত্বে যেকোন সময় এবং যেকোন প্রতিকূল বা শান্তিকালীন পরিস্থিতিতে জল, স্থল ও আকাশ পথে যেখানেই যাইবার আদেশ করা হইবে আমি সেখানেই যাইতে প্রস্তুত ও বাধ্য থাকিব ” । এই মূলমন্ত্রকে বুকে ধারণ করে এবং স্বীয়-স্বীয় সামরিক দায়িত্ব কাঁধে বহন করে দেশের প্রতিটি সেনাসদস্য এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে।
দেশের অন্যান্য সকল বাহিনী বা সংস্থার বিভিন্ন দিকের বাস্তবিক বিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে, সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার মান সবার উর্ধে স্বীকৃতি পেয়েছে বারংবার। কেননা একজন সৈনিক, সর্বদাই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যেকোন আদেশ পাওয়া মাত্রই শতভাগ দায়িত্বের সাথে তা পালন করতে সচেষ্ট থাকেন। যা অন্য কোন বাহিনী বা সংস্থায় এতোটা গভীর দায়িত্বশীলতার চিত্র লক্ষ্য করা যায়না। একজন সৈনিকের সকাল শুরু হয় শারিরীক চর্চা দিয়ে আর দিন শেষ হয় অজস্ত্র ঘাম ঝড়িয়ে নানা কায়িক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে।
প্রত্যহ সকালে এক ঘন্টা পিটি বা শারিরীক চর্চা করানো হয়, যা অত্যধিক পরিশ্রমের হয়ে থাকে। এছাড়াও অফিস টাইমে তথা ( সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১-৩০ মিনিট পর্যন্ত) নানান কায়িক পরিশ্রম করার মধ্য দিয়ে দিনের মধ্যাহ্ন কাজ সম্পন্ন করে সকল সৈনিকগণ। এপরপর আবার বিকেল গড়ালেই খেলাধূলা বাধ্যতমূলক। খেলাধূলা শেষে সন্ধ্যায় রোলকলে অংশগ্রহণ করতে হয় এবং রাতে প্রায়ই স্ট্যাডি পিরিয়ডের ব্যবস্থা থাকে।
সেনাবাহিনীতে প্রতিবছর ষান্মাসক এবং বাৎসরিক পিটি বা ব্যক্তিগত শারিরীক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ফেল করলে অতিরিক্ত পিটি তথা শাস্তির পাশাপাশি নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমনকি ফেল করা সৈনিকগণ বৈদেশিক মিশনে যেতে পারেনা এবং পদোন্নতিও প্রদান করা হয়না। এরকম শারিরীক চর্চার গুরুত্ব বা কঠিনতম ব্যবস্থা অন্যকোন বাহিনীতে নেই। যদিও এটা বিশ্বের সকল দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোয্য। তবে সৈনিকদের ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধার দিক থেকে আবার অন্যান্য দেশের তুলনায় অতি নগন্য (বেতন; খাবারের মান; বাসস্থানের মান; স্ব-পরিবার নিয়ে থাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যবস্থা; রেশন স্কেল ইত্যাদি )।
নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণঃ
সেনাবাহিনীতে সারা বছরই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ চলমান থাকে। যেখানে প্রতিটি ইউনিটের নির্ধারিত সৈনিকগণ অংশগ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিকের জীবন এবং জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত কানায় কানায় শৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ। সৈনিক জীবনে এই নিয়মিত শৃ্ঙ্খলাজনিত সকল দায়িত্ব পালন করার মধ্যে সামান্য শৃ্ঙ্খলা বহির্ভূত কোন আচরণ বা অপরাধ দৃশ্যমান হলেই কিংবা রিপোর্ট হলেই শুরু হয়ে সামরিক কঠিনতম শাস্তি।
এছাড়াও সামরিক প্রশাসনিক দৈনন্দিন কাজ এবং নিয়মিত বা অনুষ্টিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সম্পন্নর পাশাপাশি সেনানিবাসের বাইরে শীতকালীন এবং গ্রীস্মকালীন প্রশিক্ষণ রয়েছে হয়। যে প্রশিক্ষণে অত্যন্ত পরিশ্রমের দ্বারা প্রতিটি সৈনিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। এরকম নানা ধরণের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম এবং সামরিক দায়িত্ব পালনের বিপরীতে দেশের অন্যান্য সরকারি চাকুরী এবং বর্হিবিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সৈনিকদের সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত নগন্যই বলা যায়। তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তবুও দেশপ্রেম এবং নিজ বাহিনী তথা সেনাবাহিনীর প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শন পূর্বক সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিক কাজ করে যাচ্ছে নিঃস্বার্থ এবং নিরলস ভাবে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সার্বিক বিবেচনায়ঃ
সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিকের দৈনন্দিন জীবনযাপন এবং শৃঙ্খলার মানের পরিপ্রেক্ষিতেই মূলত দেশের সেরা ও প্রথম শ্রেনীর নাগরিকের পাশাপাশি, একজন গর্বীত সদস্য হিসেবে সকলের কাছে সর্বজনস্বীকৃত।
পরামর্শ –
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদিয়ে দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করুণ এবং দেশের সেরা নাগরিকত্ব লাভের পাশাপাশি একজন গর্বীত সেনাসদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করুণ।
– আর্মি মাল্টিমিডিয়।
Here You can read about “Soldier Life of the Bangladesh Army“
Pingback: Soldiers Lifestyle (সৈনিক জীবন) - Bangladesh Army
Pingback: কেন আন্তর্জাতিক সামরিক জ্ঞান থাকা জরুরী?
Pingback: পদ্মাসেতুর রেলিং এর নাট-বল্টু খোলা এবং সেতুতে প্রস্রাব করা প্রসঙ্গে
Pingback: অর্ডন্যান্স কোর অব বাংলাদেশ সেনাবাহিনী - Army Multimedia
Pingback: 90th BMA Long Course Circular - BD Army A
Pingback: অর্ডন্যান্স কোর অব বাংলাদেশ সেনাবাহিনী - Army Multimedia