সৈনিক শাকিল এবং তার সহধর্মীনির অকাল মৃত্যু
এগুলো কি মেনে নেয়া যায়?
একজন সৈনিকের জীবনটাই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের সুতায় মোড়ানো। আর সেই পরিশ্রমের বিরতী হিসেবে সাময়িক ছুটি গিয়েও একটু বিনোদন করবে কিংবা প্রিয় সঙ্গিনীর সাথে কিছুটা সময় অতিবাহিত করবে। সেটাও সম্ভব হয়ে উঠেনা আমাদের দেশের সড়ক ব্যবস্থার জন্য। অদক্ষ; অশিক্ষিত ড্রাইভার এবং টাকার বিনিময়ে ঘরে বসে পাওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারীদের কারণে অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে দেশের বহু মানুষের মূল্যবান জীবন। আর পরিবার দিশেহারা হয়ে বাকিটা পথ অত্যন্ত যন্ত্রণায় কাটাচ্ছে। সৈনিক শাকিল বগুড়ায় নিজ জেলায় ছুটিতে ছিলো, সহধর্মীনিকে নিয়ে বাইকে করে নিয়ম অনযায়ী ও ট্রাফিক আইন মেনেই ড্রাইভ করছিলো। কিন্তু ঢাকা – রংপুর মহাসড়কের শিবগঞ্জের রহবল বাজার নামক স্থানে একটি যাত্রীবাহী বাস এসে তাদের দুজনের জীবনই কেড়ে নিলো নির্মমভাবে।
বাসের ড্রাইভার বাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে বাইকটিকে এমন ভাবে ধাক্কা দিয়েছে, বাইকটিতে “আ-গু-ণ” ধরে পরিস্থিতিকে আরো ভয়াভহ করে তোলে। ড্রাইভার তাৎক্ষণিক পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু লাভ কী? ভুক্তভোগীদের বিন্দু মাত্রও কি কমবে এমন শোকের ছায়া? আর ড্রাইভারের কি আদৌ কোন গ্রহণযোগ্য শাস্তি হবে? ড্রাইভারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যা দেখে দেশের প্রতিটি ড্রাইভার শিহরীত হয়ে উঠবে। যেন প্রত্যেক ড্রাইবার অধিক সচেতন হয়ে উঠতে পারে।
সৈনিক শাকিল কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে কর্মরত ছিলো এবং তিনি একজন সু-দক্ষ ফুটবলারও, আর সেজন্যই তিনি আর্মি ফুটবল দলে চান্স পেয়েছিলো। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নের কমলিহার গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে।
তার এই অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
”ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না-লিল্লাহ রাজিউন”।
উল্লেখ্য যে, ঘটনাটি ঘটে গত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে।
আমাদের সচেতনতার উদয় হবে কী আদৌ?
মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব বর্তমানে নামে মাত্র। কোন বাস্তবিক কার্যকরী সিদ্ধান্ত কিংবা বৃহৎ পরিপরিবর্তন যেন আজকাল কারো চোখেই পড়ছেনা। এই যে, প্রতিনিয়ই তথা একের পর পর সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেই চলেছে বাংলাদেশে, এর বীপরীতে কী কী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? বিশ্বাস করুণ, আপনি ঘরে বসে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। মাত্র কিছু টাকা খরচ করলেই। এটা কোন কথা? এটা কোন সিস্টেম? দেশের বাইরে সড়ক দূর্ঘটনা নাই বললেই চলে। কারণ কী শুধুই উন্নত সড়ক ব্যবস্থা ? না। আরো অনেক বিষয় রয়েছে, যেমন কর্তৃপক্ষ এবং নাগরিক সচেতনতা, সড়কের শৃঙ্খলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান, ট্রাফিক কঠোর আইন, দক্ষ ড্রাইভার এবং বৈধ লাইসেন্স এরকম অসংখ্য ধরণে নিয়ম কানুনে রয়েছে অন্যান্য দেশের অধিক শৃঙ্খলা। যে কারণে তাদের সড়ক দূর্ঘটা অত্যন্ত নগন্ন। আর আমাদের দেশে, ট্রাফিক পুলিশকে কিছু টাকা ভিক্ষা দিলেই আর কোন সমস্যা নেই, মাথায় হেলমেডও দরকার নেই আর সাথে লাইসেন্স বা কাগজপত্ররও দরকার নেই। শুধু ঘুষ দেয়ার সামার্থ্য থাকলেই হলো। অর্থাৎ জরিমানার চাইতে ঘুষের পরিমান কম হওয়ায় এটাই প্রচলিত। কি আর বলবো। কথা গুলো অত্যন্ত কস্ট থেকে বলা। কারণ, দেশের সৈনিক এতো এতো পরিশ্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের শৃঙ্খলার কারণে; দেশের ভূল সিস্টেমের কারণে অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে একের পর এক সৈনিক কিংবা দেশের মূল্যবান নাগরিক। এটা কোন কথা। আমরা কবে সচেতন হবো? কবে সোচ্চার হবোৎ নাকি এভাবেই চলতে থাকবে?