ভূয়া সেনা অফিসার গ্রেপ্তার হলো (ক্যাপ্টেন)
ঘটনার বিবরণঃ
বাংলাদেশে এমন ঘটনা যদিও খুবই নগন্ন। কিন্তু মাঝে মধ্যে ঠিকই আচমকা যখন এমন একটি অপ্রত্যাশিত সংবাদ চোখের সামনে আসে, তখন নিশ্চয়ই সবাই অবাক হয়ে যায়। আর এটা অবাক করারই বিষয়। কারণ এমন দুঃসাহসিক অপরাধ সচারচর কেউউ করতে সাহস করেনা। কিন্তু মোঃ ইউসুফ হোসেন রায়হান নামের একুশ বছরের এক তরুণ, যিনি ২০১৮ সালে বক্সমাহমুদ দাখিল মাদ্রাসা থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় ৪.২০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর তিনি আব্দুল্লা চৌধুরী ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি এবং সেখানের বিএনসিসি রেজিমেন্ট শাখায় ভর্তি হয় (সাধারণত এই শাখার ছাত্ররা সেনানিবাসে শীতকালীন বা গ্রীষ্মকালীন প্রশিক্ষণ অনুশীলনে ট্রেনিং করার সুযোগ পায়, যে সার্টিফিকেট দিয়ে ডিফেন্সে আলাদা ভ্যাকান্সিতে চাকুরীর জন্য মাঠে দাঁদানো যায়)। তিনিও সেই প্রশিক্ষণ করেছিলেন এবং একজন সেনা অফিসারের হাটা-চলা , কথা-বার্তা কিংবা ওভার-অল স্টাইল কেমন হয়ে থাকে তা বেশ ভালই আয়ত্ব করে নিয়েছিলেন। গত ২০২০ সালের জুনের দিকে তিনি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডে ভর্তি হওয়ার জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হলেও পরবর্তিতে অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করার ঘটনা ধরা পড়ায় চাকুরীতে যোগদান করা সুযোগ হয়নি তার। মূলত চাকরী না হওয়ার পর থেকেই তিনি অন্যরকম আচরণ এবং পরিচয় গোপণ করে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া শুরু করেন।। এমনকি তিনি যেকোন অসৎ উপায়েই হোক না কেন, সেনাবাহিনীর পোশাক যোগাড় করে নিয়েছেন। এরপর সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পরিচয়ে আইডি কার্ডও বানিয়ে ফেলেন স্টুডিও থেকে। তার পর থেকেই শুরু হয় তার প্রতারণার বিভিন্ন ফাঁদ। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোশাক পরিহিত অবস্থার ছবি দিয়ে একাধিক নারীদের সাথে অবৈধ সম্পর্কের জড়ান এবং এর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করাও শুরু করে দেন। তার মোবাইলে একাধিক নারীর সাথে অশ্লীল ও আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া গেছে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তার অবৈধ ও জালিয়াতি করার নথিপত্রাদীর প্রমাণ মিলেছে।
আইনগত ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থাঃ
উক্ত অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করাও হয়েছে। আসামী মোঃ ইউসুফ হোসেন রায়হানকে গ্রেফতার করার জন্য সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। তার মামলা নং – ০৩, তারিখঃ ০২/০৫/২০২২; এবং ধারা গুলো হচ্ছে – ১৪০/৪৬৮/৪৭১/৪২০/৫১১ দণ্ডবিধি ।
নোটঃ উল্লেখ্য যে, বিএনসিসি শাখার ছাত্রদের সেনাবাহিনী কর্তৃক যখন স্বল্প মেয়াদী (১৫/৩০/৪৫ ইত্যাদি দিনের) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তখন সেনাবাহিনীর পোশাক দেয়াও হয়। তবে, বিএনসিসি পোশাকের গঠনপ্রণালীতে কিছু পরিবর্তন থাকে। যেমন সোল্ডার ব্যাচ, র্যাং , ক্যাপ বা ক্যাপের ব্যারেট কিংবা রং ইত্যাদি। যদিও সেগুলোকে আবার পরিবর্তন করাও যায়। অর্থাৎ অফিসার র্যাং বা অন্যান্য সরঞ্জামাদী লাগিয়ে হুবুহু সেনাবাহিনীর পোশাক বানিয়ে ফেলা সম্ভব।
এমন ঘটনা ঘটার কারণ প্রসঙ্গে কিছু কথাঃ
সেনাবাহিনীতে যেসকল বেসামরিকবর্গ চাকুরী করেন। তারা চাইলেই এই ধরণের অপরাধের জন্ম দিতে পারেন। যেমন “ধোপা” , তারা সাধারণত সেনা সদস্যদের পোশার ধৌত করে থাকেন এবং আয়রণও করে থাকেন। তারা চাইলেই যেকোন উপায়েই হোক দুই-একটা পোশাক সরিয় সিভিলে কাউকে দিয়েও দিতে পারেন কিংবা বিক্রিও করতে পারেন। এমন ঘটনাও সেনাবাহনীতে ইতিপূর্বে ঘটেছে যে, কোন কোন সেনা সদস্যর কাপড় ধোপা খানায় পাওয়া যাচ্ছেনা বা পরিবর্তন হয়ে গেছে ইত্যাদি।
এরপর আসি টেইলর এর কাছে, যারা সেনাবাহিনীতে জামা-কাপড় তথা সেনা পোশাক-পরিচ্ছেদ বানিয়ে থাকেন। তারা চাইলেও, কিছু পরিমানে ইউনিফর্ম এবং কাপড় সরিয়ে ফেলতে পারেন। যদিও ভেরিফিকেশন খুব ভালোভাবে করেই, তাদের কন্টাকে কাজ বা চাকুরী দেয়া হয়। তবুও, মানুষের বিশ্বাস কতক্ষণ।
এরপর আসি চিরসত্য একটি ঘটনায়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেনানিবাসের বাইরেও স্ব-পরিবারে বসবাস করে থাকেন। অনেক সময় পোশাক-পরিচ্ছেদ ছাঁদে কিংবা খোলা বারান্দায় শুকাতে দেয়া হয়। পার্শ্ববর্তী কোন সিভিল লোকের কু-চিন্তা থেকেও চুরি হয়ে যেতে পারে বা অপ্রত্যাশিত ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, এরকম বিবিধ কিছু কারণে একটি বাহিনীর পোশাক বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকে। যেখানে আসলে কিছুই করার থাকেনা। আর আর্মি স্টোর গুলোতে সেনাবাহিনীর সরঞ্জমাদি বিক্রি করা হয়। সেখানে প্রায়ই দেখা যায় ভেরিফাই ছাড়াই সেনাবাহিনীর পোশাকের বিভিন্ন সরঞ্জমাদি বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারত আর্মি স্টোর গুলো সেনানিবাসের ভিতরে এবং নিকটবর্তী স্থানে হয়ে থাকে। বলা যেতে পারে এটিও একটি দুর্বল পয়েন্ট। আর্মি স্টোরের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর আরো সাবধান হওয়া উচিত। সেনাসদস্যর পরিচয়পত্র প্রদর্শন ছাড়া কোন সামরিক সরঞ্জামাদী বিক্রি করা উচিত নয় বলে মনে করি। এতে অবশ্যই ঝুঁকি থাকে, সরঞ্জামাদি বাইরে চলে যাওয়ার।
পরামর্শঃ
মনে রাখবেন, একজন সেনা কর্মকর্তা কখনই পোশাক পরিহিত অবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আনপ্রোফেশনালি ছবি প্রকাশ করেনা। যদিও অনেক সেনাসদস্য তথা সৈনিক গণ এটা করে থাকেন, আর সেজন্য অনেক সৈনিকের শাস্তিও দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। যাইহকো, একজন সেনা অফিসার যথেষ্ট উচ্চ পর্যায়ের এবং সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের মাথায় দক্ষতা সর্বদাই বড় বড় দায়িত্ব পড়ে আছে। তাদের লক্ষ্যই হলো দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উচ্চ পদে পদার্পন। এমনকি জেনারেল হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই প্রত্যেক অফিসার এগিয়ে যায় নানান ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ার অহেতুক সময় পাড় তারা অন্তত করেন না কিংবা সেটা করার জন্য তাদের সময়ই থাকেনা। তাই, অনুরোধ যে, সামরিক সদস্য কিংবা অফিসারই যদি মনে হয়, সেক্ষেত্রে আপনি (ভিক্টিম) চাকুরী জীবনের বিভিন্ন ভিডিও (ছবি এডিট করা যায় তাই ভিডিও), সেটা দেখতে চেস্টা করতে পারেন। যদি কেউ সত্যিই চাকুরী করে থাকেন, তাহলে তার মোবইলে নানান সময়ের নানান সরকারি কর্মকান্ডের দৃশ্যাবলী বা ভিডিও চিত্র থাকবে। একটা বা দুইটা ছবি কিংবা বাসায় বসে পোশাক পড়ে ভিডিও কল দিলেই প্রমান হয়না যে সে চাকুরী করে। যদি আশে পাশে অন্যান্য আর্মি সদস্য থাকে, তাহলে বোঝা যাবে, হ্যাঁ তিনি সত্যিই চাকুরী করেন। এরকম কিছু সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো, বিশেষ করে যাদের সাথে এমনটা হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কারো সাথে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে, দয়াকরে দ্রত সেনাসদরে বা নিকটতম থানায় কিংবা নিকটতম সেনানিবাসের এমপি চেকপোস্টে অভিযোগ করুণ। অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশা করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ।
সেনাবাহিনীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২২ঃ