অর্ডন্যান্স কোর অব বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Ordnance Core / Corps of Bangladesh Army)

ভূমিকাঃ

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা-যুদ্ধের সময় “আর্মি অর্ডন্যান্স” কোরে মাত্র কয়েকজন বাঙালি অফিসার ও সৈন্য ছিল। সেনাবাহিনীতে অর্ডন্যান্স কোরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে  এবং এই কোর সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে সুপরিচিত লাভ করেছে। সেবা সংক্রান্ত কোর বা শাখার মধ্যে অর্ডন্যান্স কর্পস  অন্যতম একটি সেক্টর বা শাখা। যদিও সেনাবাহিনীতে প্রত্যেক কোরের গুরত্বই কোন অংশে কম নয়। তাই কোর নিয়ে আলোচনায় আমাদের আজকের বিষয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর “অর্ডন্যান্স কোর বা কর্পস”। সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমানে এই কোরে চাকুরীর কার্যক্রম,  পদোন্নিতি, মিশন ইত্যাদি  সুবিধা অসুবিধা, নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, তাই সঙ্গেই থাকুন।    

মৌলিক কাজের সারাংশঃ

সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স কোরের মৌলিক কাজ হচ্ছেঃ- যুদ্ধ ও শান্তি কালিন সময়ে, সেনাবাহিনীর সকল সদস্যদের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ” সাজ-সরঞ্জাম; অস্ত্র; ভারী সামরিক যান; পোষাক পরিচ্ছেদ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারের দ্রব্য সামগ্রি” সরবরাহ করা। কাজেই এই কোরের কার্যক্রম অত্যস্ত বিস্তৃত ।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

আমরা নিশ্চয়ই জানি, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম। এর পর সেনাবাহিনীর প্রতিটি অঙ্গ বা কোরের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী পূর্ণাঙ্গভাবে গঠণের  রুপ নেয়ার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে আরো শক্তিশালী হতে থাকে। বর্তমানের সেনাবাহিনী যথেষ্ট শক্তি সামর্থ্যবান এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পুরো সশস্ত্র বাহিনীই আজ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির পথে।   

অর্ডন্যান্স কোরের মূল মন্ত্র হলো – “ দৃপ্ত, হস্ত করি, সশস্ত্র”।  গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অর্ডন্যান্স কোর এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অবিস্থিত। অর্থাৎ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যারা যোগদান করে থাকেন তাদের প্রশিক্ষণ এই সেনানিবাসেই অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণ শেষে সকল সেনানিবাসের অর্ডন্যান্স কোরের ইউনিটে কোটা অনুসারে নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনাসদস্যদের বদলী করা হয়। এই কোরের সদস্যদের  ইউনিফর্মের সোল্ডারে অর্ডন্যান্স শব্দটি লেখা থাকে এবং কোরের ক্যাপ হিসেবে নিচের ছবির মত ক্যাপ ইস্যু করা হয়। যা বিভিন্ন প্যারেডে পরিধান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে অর্ডন্যান্স কোরের অনন্য-সাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, অর্ডন্যান্স সেন্টার এ্যান্ড স্কুলকে, বাংলাদেশ জাতীয় পতাকা প্রদান করেন।  প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অর্ডন্যান্স কোর, জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেই চলেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিধ্বস্ত কুয়েতের নিরাপত্তায়, মাইন সংক্রান্ত দায়িত্বে, ঝুঁকিপূর্ণ গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক অপসারণে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স কোরের সদস্যরা অসামান্য অবদান এবং সাহস ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।  জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে, অর্ডন্যান্স কোরের সদস্যরা যুদ্ধবিধ্বস্ত অন্যান্য  বিভিন্ন দেশে অসামান্য অবদান রেখে দেশ ও জাতির জন্য বেশ সম্মান বয়ে এনেছে।

Cape Ordnance Corps (অর্ডন্যান্স কোরের টুপি এবং পোশাক)।

নিয়মিত লক্ষ্যঃ

অর্ডন্যান্স  কোরের বিস্তৃত দায়িত্ব সমূহের মধ্যে যুদ্ধ ইউনিটকে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করা ;  সংগ্রহ এবং রক্ষণাবেক্ষণ একটি বিশেষ দায়িত্ব বা কার্যক্রম।

 

বিশেষ মূল্যায়নঃ

অর্ডন্যান্স ডিপার্টমেন্ট,  আর্মির একটি বেশ শক্তপক্ত শাখাই বলা চলে, যার সদর দপ্তর ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত।  অর্ডন্যান্স কোর এর মূল লক্ষ্য বা মিশন হচ্ছে – সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ শক্তি প্রদানের জন্য, শান্তি ও যুদ্ধের সময় অস্ত্র সিস্টেম; গোলাবারুদ; ক্ষেপণাস্ত্র; ইলেকট্রনিক্স এবং স্থল গতিশীলতা সামগ্রীর উন্নয়ন; উৎপাদন; অধিগ্রহণ  এবং টিকিয়ে রাখাকে সাপোর্ট বা সমর্থন করা। বিভিন্ন বিষয়ে মতবাদ; প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত উন্নয়নের উদ্দেশ্যে শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন অর্ডন্যান্স কোরের প্রধাণ।

বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং সমরাস্ত্র কারখানায়  এই কোরের সদস্যদের রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। বলা যেতে পারে যে, একজন সৈনিকের পায়ের বুট থেকে শুরু করে, মাথার হিলমেট পর্যন্ত সকল সাজ সরঞ্জাম এই অর্ডন্যান্স কোর ইস্যু করে থাকে। এমনকি এই সরঞ্জাম পুরনো বা অকেজ হয়ে গেলেও, প্রত্যেক সেনানিবাসে নির্দিষ্ট সময়ান্তে অফিস ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জমা নেয়া হয় এবং নতুন সরঞ্জাম ইস্যু করাও হয়।

কেন্দ্রীয় অফিসঃ

এই কোরের সেনাসদস্যদের রেকর্ড অফিস, গাজিপুর সেনানিবাসে অবস্থিত। যেখান থেকে চাকুরীকালীন সকল বিষয়ের ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে  পেনশন অর্থ প্রদান অবদী সকল দাপ্তিরিক ব্যবস্থা সমূহ সম্পন্ন করা  হয় তথা পেনশন প্রদানের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

পদোন্নতিঃ

যথাযথ যোগ্যতার বিপরীতে অবশ্যই চাকুরীজীবনে বৈদেশিক মিশনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, পদাতিক কোরের ন্যায় শতভাগ সেনাসদস্যদের বৈদেশিক মিশনের সুযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু পদোন্নতির দিক থেকে আবার অর্ডন্যান্স কোরের সদস্যগণ যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে। চাকুরীর ৭-৮ বছরের মধ্যেই প্রথম পদোন্নতি হয়ে যায়। কোন কোরে কত বছরে পদোন্নতি হয়, সেটা প্রত্যেক কোরের ভিডিওতেই আলোচনা করার পাশাপাশি ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়েছে।

এবার আসি নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়েঃ

অন্যান্য কোরের ন্যায় প্রত্যহ শরীর চর্চা তথা পিটি প্যারেড গেইমস  এবং যুদ্ধ প্রশিক্ষণ সহ নানা বাধ্যতামূলক কার্যক্রম হয়ে থাকে। তবে অফিস টাইমের কার্যক্রম কোর ভিক্তিক কার্যক্রম হয়ে থাকে। যেমন, এই কোরের অধিকাংশ সেনাসদস্যগণ বিভিন্ন ইউনিটের সরঞ্জামাদি ইস্যুকরণ, নথিভুক্তকরণ, সরঞ্জাম জমা নেয়া, স্টোর রক্ষণাবেক্ষণ, সরঞ্জামাদি কেন্দ্রীয় স্থল থেকে সংগ্রহকরণ ইত্যাদি কার্যক্রমের সাথে নিয়োজিত থাকতে হয়। এছাড়াও প্রশাসনিক কার্যক্রম তো রয়েছেই।

ছুটিঃ

ছুটির বিষয়ে যদি বলি, এটার নিয়ম আসলে সকল কোরের জন্য একই। তবে অন্যান্য কোরের থেকে নির্দিষ্ট  দায়িত্বর পরিমাণ একটু বেশি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে কিছু ‍কিছু ক্ষেত্রে ছুটির পরিমাণ কিছুটা কম বলা যেতে পারে। পদাতিক কোরে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং নির্দিষ্ট দায়িত্ব কম থাকায় যেকোন সময়; যেকোন সদস্যদের প্রয়োজন সাপেক্ষে ছুটি দেয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তুলনামূলকভাবে একটু সহজ হয়। তবে, সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় দেয়া রয়েছে যে, কোন সেনাসদস্যদের কোনভাবেই ছুটিবিহীন তিনমাস যেন অতিক্রম  না হয়। অর্থাৎ তিন মাস হওয়ার পূর্বেই সাধারণ ছুটি দেয়া বাধ্যতামূলক। আর সাপ্তাহিক ছুটি বা ছুটি সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি ভিডিও আমাদের ইউটিইব চ্যানেলে দেয়া রয়েছে সেটি দেখে সকল কোরের ছুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।

কোর  পরিবর্তনের সুযোগ সুবিধা এবং পার্থ্যক্যঃ

ভিন্ন ভিন্ন কোরে ভিন্ন ভিন্ন কাজ বা দায়িত্ব থাকায় ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ সুবিধায় কিছুটা পার্থক্য থাকবেই। আর এটা খুবিই স্বাভাবিক। তাই, সেনাবাহিনীতে ভর্তিকালীন সময়ে, রিক্রটিং অফিসার একজন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে, সার্বিকভাবে বিবেচনা সাপেক্ষে কোর প্রদান করে থাকে। এই কোর স্থায়ী এটি কখনোই পরিবর্তন করা যায় না। তবে, অফিসারদে বেলায় এই নিয়ম প্রযোয্য নয়। অর্থাৎ প্রয়োজন অনুসারে এবং উচ্চ পর্যায়ের অফিসারদের ভিন্ন ভিন্ন কোরের দায়িত্ব পালন করতে হয়, আর সেজন্য অফিসারদের কোর থেকে অন্য কোরে বদলীর প্রথা চলমান রয়েছে। 

মূল্যায়ন বা অবদানঃ

অর্ডন্যান্স কোরের সাংগঠনিকতা এবং অবকাঠামোগ সকল উন্নয়ন যেন, সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে করেছে আরও শাণিত। ইতিমধ্যেই দুটি নতুন ডিভিশন অর্ডন্যান্স কোম্পানি গঠন; নব অর্ডন্যান্স ডিপো এবং স্বতন্ত্র গোলাবারুদ প্লাটুন প্রতিষ্ঠার কার্য-প্রক্রিয়া; সিএডিতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও যুগোপযোগী এ্যামিউনিশন ল্যাবরেটরি স্থাপন; সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত, বৈদেশিক মিশন এবং বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণের সুযোগদান বাস্তবায়িত হয়েছে। সর্বোপরি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সমরসম্ভারে দৃশ্যমান সমৃদ্ধি অর্ডন্যান্স কোরের কর্মকান্ডকে করেছে বহু গতিময় এবং যুগপযোগী।  এই কোরের সদস্যগণ কোরের উন্নতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে অনন্য  ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলেই কর্তৃপক্ষ মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এবং সকল সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

  

উপসংহারঃ

তাহলে সার্বিকভাবে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গঠন মানব দেহের মত। কোন অঙ্গের গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। তাই সেনাবাহিনীতে যুদ্ধ কিংবা শান্তিকালীন সময়ে প্রতিটি কোরের  অবদান বা কার্যক্রমের গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যময়। অর্ডন্যান্স কোরর প্রতিটি সেনাসদস্যদের সুস্থতা এবং সাফল্য কামনা করে আলোচনাটি এখানেই শেষ করছি। সামরিক গুরুত্বপূর্ণ আপডেট এবং শিক্ষনীয় বিষয় জানতে সাইটটি সাবস্ত্রাইব করে সাথেই থাকুন। আবার আসবো অন্য কোন আলোচনা নিয়ে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।

অন্যান্য বিশেষ কন্টেন্টঃ

*** কেন একজন সৈনিক প্রথম শ্রেনীর নাগরিক

*** সশস্ত্র বাহিনী কি, কেন?

*** সৈনিকের দৈনন্দিন জীবন – বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Lifestyle of Bangladesh army)

Army Multimedia

Army Multimedia is Basically content creator for the army navy and airforce of Bangladesh & International. You Can visit our all social media to learn about the world military. Always video Uploading on Facebook & youtube about the military.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!